কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু বার্ষিকী আজ

‘অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখো, দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা’—এভাবেই গেয়েছিলেন বাংলা ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। রুপালি গিটার ফেলে চলে যাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন অনেক আগেই। তবে সেই সময়টা যেদিন এলো, অশ্রু গোপন করে রাখতে পারেননি তাঁর ভক্তদের কেউই। ২০১৮ সালের ঠিক এই দিনে অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু। আজ এই সুরের সাধকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।

কয়েকটি প্রজন্মকে গানের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। সেই ক্যাসেট-ফিতার কাল পেরিয়ে স্মার্টফোন-ল্যাপটপের যুগে এসেও তাঁর গানের আবেদন কমেনি এতটুকুও। বইয়ের ফাঁকে তাঁর ভিউকার্ড জমানোর সেই উন্মাদনা কখনো কি ভোলা সম্ভব? অটোগ্রাফের জমানা শেষে ফটোগ্রাফের আমলে, বাঙালির চিঠি লেখার অভ্যেস ফুরিয়ে যাওয়ার পরে, ই-মেইল, ফেসবুকের কালে প্রবেশের পরেও তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুকুও।

কত লক্ষ-কোটি বিরহী প্রেমিক তারাভরা রাতে তাঁর গানকে সঙ্গী করেছেন, সে হিসাব কেউ কি জানে? ফেরারি মন নিয়ে নিয়ন আলোয় হেঁটে যাওয়া তরুণ-তরুণীর বড্ড আপনজন ছিলেন বাচ্চু। ইট-কাঠের শহর ঢাকাবাসীকে সুরের মূর্ছনায় ভাসাতে মঞ্চে কেবল আইয়ুব বাচ্চুর উপস্থিতি থাকলেই হতো। কী এক অদ্ভুত মায়া, টান ছিল তাঁর গিটারে! গভীর কোনো বেদনা থেকেই কি অমন বিরহের সুর তুলতেন তিনি!

হৃদয় স্পর্শ করে যাওয়া অমন সুরের মোহে আচ্ছাদিত থাকত উপস্থিত সকলে। শুধু কি শহর! মফস্বল কিংবা গ্রামেও আইয়ুব বাচ্চুর উপস্থিতি মানেই ছিল রোমাঞ্চকর, সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু মুহূর্ত।

তবে সবাইকে দুহাতে আনন্দে বিলিয়ে বেড়ানো আইয়ুব বাচ্চুর সুরের বুকে লুকিয়ে থাকা কান্নার সন্ধান পেয়েছিলেন ক’জনা? সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আকাশে উড়াল দেওয়ার প্রবণতা কেউ কি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিলেন?

বড্ড অচেনা হয়ে বিদায় নিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এভাবেই কি যাওয়ার কথা ছিল! এভাবে কি যেতে হয়! মঞ্চে সুরের ঝংকার তোলা সুরস্রষ্টার চিরবিদায় বেলায় শীতপ্রকৃতির মতোই নির্জীবতা বিরাজ করছিল সর্বত্র। কফিনবন্দি বাচ্চু সবাইকে কাঁদিয়ে উড়াল দেওয়ার দিনেই যেন শেষ হলো বাংলা সংগীত জগতের একটি অধ্যায়।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। জনপ্রিয় ব্যান্ডদল এলআরবির দলনেতা ছিলেন তিনি। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ব্যান্ডজগৎ।

১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে পথচলা শুরু করেন। এরপর ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেন। নব্বইয়ের দশকে যাত্রা শুরু হয় ‘ব্যান্ডদল এলআরবি’র।

দীর্ঘ কয়েক দশকে অসংখ্য কালজয়ী, জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। ‘চলো বদলে যাই,’ ‘হাসতে দেখো,’ ‘এখন অনেক রাত,’ ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’ ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি,’ ‘সুখের এ পৃথিবী,’ ‘ফেরারী মন,’ ‘উড়াল দেবো আকাশে,’ ‘বাংলাদেশ,’ ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি,’ ‘এক আকাশের তারা,’ ‘সেই তারা ভরা রাতে,’ ‘কবিতা,’ ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি,’ ‘তিন পুরুষ,’ ‘যেওনা চলে বন্ধু,’ ‘বেলা শেষে ফিরে এসে,’ ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি,’ ‘তিন পুরুষ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই কিংবদন্তি শিল্পী।

পাঠকের মতামত: